লেখকঃ মোঃ রাফিউজ্জামান চৌধুরী রাফি
স্কোয়াশ খেলোয়াড়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
স্কোয়াশ এটা কি কোনো খেলা?
সাধারণ কাউকে যদি বলি স্কোয়াশ খেলি তাহলে অনেকক্ষণ চিন্তা করে মাথা নাড়িয়ে চাড়িয়ে বলে, এটা কী খেলা? কিভাবে খেলে? কোথায় খেলে?
অনেকক্ষণ বুঝানোর পর তারা অনেকে না বুঝেও বুঝছে বলে। আবার ভিডিও দেখানোর কেউ চিনে আবার কেউ জীবনে কখনো দেখেনি।
উন্নত দেশ গুলোতে স্কোয়াশ খেলাটি খুবই জনপ্রিয় হলেও বাংলাদেশে জন সাধারনের কাছে জনপ্রিয় নয়।
স্কোয়াশ খেলাটি ত্রিমাত্রিক খেলা যেখানে
মানসিক,শারিরীক ও বুদ্ধি-কৌশল বৃদ্ধি হয়। যাইহোক আজকে আমরা জানব স্কোয়াশ নিয়ে,
স্কোয়াশ খেলার ইতিহাস? কেন উন্নত দেশে স্কোয়াশ খেলাটি এত জনপ্রিয়? আমরা কিভাবে পরিচিত ও সচেতন হবো স্কোয়াশ খেলায়? স্কোয়াশ খেলায় বাংলাদেশের অবস্থান?
স্কোয়াশ র্যাকেট স্পোর্টস, যার উৎপত্তি ১৯শ শতকের শুরুতে ইংল্যান্ডের হারো স্কুলে। এটি মূলত টেনিসের একটি পরিবর্তিত রূপ, যেখানে ছোট কোর্টের ভেতরে দেয়ালে বল মেরে খেলা হয়।
স্কোয়াশের উৎপত্তি হয় ১৮৩০-এর দশকে, যখন ইংল্যান্ডের হারো স্কুলের ছাত্ররা দেয়ালে বল মেরে একটি নতুন ধরনের খেলা তৈরি করে। প্রথম দিকে, এই খেলাটি “র্যাকেটস” নামে পরিচিত ছিল, যা পরে “স্কোয়াশ” নামে জনপ্রিয় হয়।১৮৬৪ সালে প্রথম আনুষ্ঠানিক স্কোয়াশ কোর্ট তৈরি করা হয়।
২০শ শতকের শুরুতে স্কোয়াশ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে, বিশেষ করে ভারত, মিশর, পাকিস্তান এবং অস্ট্রেলিয়ায়।১৯৭৬ সালে প্রথমবারের মতো পুরুষদের বিশ্ব স্কোয়াশ চ্যাম্পিয়নশিপ এবং ১৯৭৯ সালে মহিলাদের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ অনুষ্ঠিত হয়।
স্কোয়াশ উন্নত দেশে জনপ্রিয় হওয়ার মূল কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে:
স্বাস্থ্যকর ব্যায়াম: এটি অত্যন্ত শক্তিশালী কার্ডিওভাসকুলার ব্যায়াম, যা ফিটনেস-সচেতন মানুষদের কাছে জনপ্রিয়। উন্নত দেশের মানুষ সাধারণত স্বাস্থ্য ও ফিটনেস সম্পর্কে বেশি সচেতন।
ইনডোর খেলা: স্কোয়াশ ইনডোরে খেলা হয়, তাই জলবায়ুর উপর নির্ভর করে না। শীতপ্রধান বা বৃষ্টিবহুল দেশগুলোতে ইনডোর স্পোর্টস জনপ্রিয় হয়ে থাকে।
সীমিত জায়গায় খেলা যায়: স্কোয়াশ খেলার জন্য খুব বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় না। শহুরে জীবনে যেখানে জায়গার অভাব, সেখানে এটি খুব সহজে খেলা যায়।
সময়ের সাশ্রয়: স্কোয়াশ দ্রুতগতির খেলা, তাই অল্প সময়ের মধ্যেই ভালো শরীরচর্চা করা যায়। ব্যস্ত পেশাদাররা সহজেই এই খেলা খেলতে পারেন।
সুবিধাজনক স্পোর্টস সেন্টার: উন্নত দেশে অনেক আধুনিক স্পোর্টস সেন্টার ও ক্লাব রয়েছে, যেখানে স্কোয়াশ খেলার সুবিধা দেওয়া হয়।
সামাজিক মর্যাদা: অনেক দেশে স্কোয়াশকে এলিট বা অভিজাতদের খেলা হিসেবে ধরা হয়। অফিস, কর্পোরেট জগৎ ও উচ্চবিত্ত শ্রেণির মানুষদের মাঝে এটি জনপ্রিয়।স্কোয়াশ সচেতনতা ও সাধারণ মানুষের মধ্যে পরিচিতি বৃদ্ধিঃ স্কোয়াশ একটি দ্রুতগতির এবং কৌশলগত খেলা, যা বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হলেও বাংলাদেশে এখনো তুলনামূলক কম পরিচিত। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটি ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। অনেকেই এই খেলাটির সম্পর্কে সচেতন নন বা জানেন না কোথায় এটি খেলা যায়। তাই স্কোয়াশের ব্যাপারে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি।স্কোয়াশ একটি ইনডোর র্যাকেট খেলা, যেখানে দুজন বা চারজন খেলোয়াড় বদ্ধ কোর্টে বলকে দেয়ালের সাথে আঘাত করে পয়েন্ট অর্জনের চেষ্টা করে। এটি শরীরের ফিটনেস বৃদ্ধি, স্ট্যামিনা উন্নয়ন এবং মানসিক দৃঢ়তা গঠনে সহায়ক।বাংলাদেশে স্কোয়াশের প্রচার ও প্রসার এখনো সীমিত। কিছু নির্দিষ্ট ক্লাব এবং জিমে স্কোয়াশ খেলার ব্যবস্থা থাকলেও, সাধারণ মানুষের মধ্যে এর গ্রহণযোগ্যতা তুলনামূলক কম। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে খেলার প্রচার বাড়ানো গেলে এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেতে পারে। টেলিভিশন, সোশ্যাল মিডিয়া এবং সংবাদপত্রের মাধ্যমে স্কোয়াশ সম্পর্কে তথ্য প্রচার করতে হবে।স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে স্কোয়াশ ক্লাব গঠন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্কোয়াশ ক্লাব চালু করলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হবে।সরকার ও স্পনসররা স্কোয়াশ কোর্ট তৈরিতে সহায়তা করলে খেলাটির বিস্তার সহজ হবে।স্কোয়াশ গেমের প্রতি সাধারণ মানুষের সচেতনতা বাড়ানো হলে এটি বাংলাদেশের ক্রীড়াক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে। সঠিক প্রচার ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তুলতে পারলে ভবিষ্যতে এটি জনপ্রিয় একটি খেলা হয়ে উঠতে পারে। স্কোয়াশে বাংলাদেশের অবস্থানঃ বর্তমানে স্কোয়াশে বাংলাদেশ এর অবস্থান দেশ পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। প্রতিবছর দেশের বাইরে বাংলাদেশি খেলোয়াড়রা অংশগ্রহণ করে থাকে চীন থেকে বিকেএসপির আরাফাত মোল্লা স্বর্ণ পদক অর্জন ও নেপাল থেকে বাংলাদেশ স্কোয়াশ জাতীয় দলের নারী পুরুষ উভয় রানার্সআপ হয়ে বিশ্ব মঞ্চে গৌরব অর্জন করে।প্রতিবছর অসংখ্য জাতীয় পর্যায়ে টূর্ণামেন্ট অনুষ্ঠিত হয় যেখানে অনূর্ধ্ব-৯ থেকে অনূর্ধ্ব-১৯ ছেলে-মেয়ে ও জাতীয় পর্যায়ে উন্মুক্ত নারী পুরুষ এবং বিশ্ববিদ্যালয় গ্রুপে খেলোয়াড়রা খেলে থাকে। বাংলাদেশে প্রতিটি জেলায় স্কোয়াশ কোর্ট পুনরদ্ধার ও চালু করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ স্কোয়াশ ফেডারেশন কাজ করে চলছে। বর্তমানে বিকেএসপি তে স্কোয়াশ খেলায় ক্ষুদে প্রতিভাবান অনেক খেলোয়াড় তৈরি হচ্ছে যারা বাংলাদেশ স্কোয়াশ কে উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাবে। বর্তমানে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, ক্লাব, ঢাকা স্কোয়াশ একাডেমিতে খেলোয়াড়রা নিয়মিত অনুশীলন করে। বাংলাদেশের স্কোয়াশ কে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নেওয়ার জন্য বিদেশি কোচ ইরানি ও পাকিস্তানি কোচ আনা হয় প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য। বাংলাদেশ কে এই পর্যায়ে আসার পেছনে এক জনের কথা না বললেই নই বাংলাদেশ স্কোয়াশ স্কোয়াশ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জি এম কামরুল ইসলাম, এসপিপি (অবঃ) তিনি যেভাবে বাংলাদেশ স্কোয়াশ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে স্কোয়াশ এর শক্ত ভিত্তি করে দিচ্ছে যা সামনে সাফল্য নিয়ে আসবে। তরুণদের অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্য আরও বাংলাদেশের স্কোয়াশ প্রেমী ক্লাব সদস্য গুলশান ক্লাবের ফায়াজ রহমান, আবিদ মনসুর ও চট্টগ্রাম ক্লাবের সাজ্জাদ আরেফিন আলম,ফজলে আহমেদ ওয়ালি তারা স্কোয়াশ নিয়ে কাজ করে চলছে।চলুন আপনি আমি আমরা সবাই মিলে বাংলাদেশ স্কোয়াশ কে বিশ্বে মঞ্চে তুলে ধরি।